মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল শাহ আলম খোকন: নিউজ ডিপ্লোমেটস্
উন্নত, মানবিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশ ও প্রবাস—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে # আমি বাংলাদেশ পক্ষের মানুষ, অন্য কোনো পক্ষ বুঝি না, বাংলাদেশ পন্থা যে থাকবে, তার জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা
যথাযোগ্য মর্যাদায় টরন্টোয় উদ্যাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, টরন্টোর দিনব্যাপি কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কনসাল জেনারেল মো. শাহ আলম খোকন। এ সময় কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পতাকা উত্তোলনের পরে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সন্ধ্যায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় কনসাল জেনারেল মো. শাহ আলম খোকন মহান মু্ক্তিযুদ্ধের শহীদ ও যুদ্ধাহতদের পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা একটি লাল-সবুজের পতাকার নিচে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রত্যেককে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশ পক্ষের মানুষ, অন্য কোনো পক্ষ বুঝি না, বাংলাদেশ পন্থা যে থাকবে, তার জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা।

অতিথিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জুলাই ২৪ না হলে আজ আমি হয়তো এখানে থাকতাম না, আপনারা আমন্ত্রিত হতেন না। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর জুলাই আমাদের উপহার দিয়েছে ‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার’। তিনি বলেন, আমরা সবসময় শুনি, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু ভোটাধিকার না থাকায় প্রবাসীরা এতকাল সেই মালিকানা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এই প্রথম আপনারা মালিকানা পেয়েছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের মালিকানা বুঝে নেবেন। এজন্য সবাইকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার অনুরোধ জানান। আলোচনা সভায় টরন্টোয় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধি ও কানাডায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলর ও হেড অব চ্যান্সেরি বিদুষ চন্দ্র বর্মনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতে তিনি আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে কনস্যুলেট জেনারেলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীর সুস্থতা কামনা করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী পাঠ করে শুনান কনস্যাল জেনারেল এবং কাউন্সিলর।

আলোচনা পর্বের আগে পরিবেশন হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাহিদ আক্তার পুনমের সঞ্চালনায় বিজয়ের গান পরিবেশন করেন মিথুন ও তার দল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনিরুদ্ধ সুর ও ফারহানা ইসলাম। কবিতা আবৃত্তি করেন কামরান করিম ও ফারাহ আরেফিন।
কনস্যুলেটের তথ্য সেবাকে ভার্চুয়ালি উন্মুক্ত করে দেয়া, কাজের কর্মঘন্টা বাড়ানো এবং ওয়েব সাইট সহজিকরণ ও সময়োপযোগী করার বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে কনস্যাল জেনারেল শাহ আলম খোকন বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ও গঠনমূলক পরামর্শ আমাদের এই সেবার মান আরও উন্নত করতে অনুপ্রাণিত করবে। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা শুধু প্রবাসী নন—আপনারা বাংলাদেশের সম্মানজনক দূত। আপনাদের আচরণ, সাফল্য ও সামাজিক অবদান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল করছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স যেমন দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে, তেমনি আপনাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য একটি উন্নত, মানবিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশ ও প্রবাস—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আলোচনায় রাজনীতিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত বিজয় আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
তারা বলেন, বিজয় দিবস কেবল একটি ঐতিহাসিক স্মরণ নয়, এটি একটি মূল্যবোধের প্রতিশ্রুতি—মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার। বক্তারা বাংলাদেশ কনস্যুলেট, টরন্টোর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, জাতীয় দিবসগুলো প্রবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের মাধ্যমে প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও প্রবাস একসঙ্গে কাজ করলেই গড়ে উঠবে একটি সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল বাংলাদেশ।

আলোচনায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল কাজী কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান, মাহবুবুর রব চৌধুরী, আহাদ খন্দকার, মজিবুর রহমান, মাহবুব চৌধুরী রনি, দুলাল আহমদ চৌধুরী, মঈনুদ্দিন চৌধুরী, রাব্বিউল হাসান, জাকির খান, রোকেয়া পারভিন, আবুল কালাম আজাদ, রেহানা আক্তার, সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, শাহিন সিদ্দিকী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা খান ইমরুল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক নুরুর রশীদ, সাদ চৌধুরী, নওয়াজ চৌধুরী সাজু, জমসেদ মিশকাত চৌধুরী, মিসবাহুল কাদির ফাহিম, জুবায়ের আহমদ সিপিএ, মহসিন আহমদ চৌধুরী, মোশতাক আহমদ সিপিএ, রাফি আহমদ, গুলশান ই জাহান লিজা ও মকবুল হোসেন মন্জু, এনামুল হক, ইঞ্চিনিয়ার আবু জহির সাকিব ও এমাদ চৌধুরীসহ বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।









