Tuesday, 23 December 2025
The News Diplomats
ডিপ্লোমেটস প্রতিবেদক :
Publish : 10:18 AM, 22 December 2025.
Digital Solutions Ltd

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিজয় উৎসব যেন টরন্টোয় একখণ্ড বাংলাদেশ

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিজয় উৎসব যেন টরন্টোয় একখণ্ড বাংলাদেশ

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিজয় উৎসবে বক্তব্য কনসাল জেনারেল শাহ আলম খোকন ও এমপিপি ডলি বেগম।

Publish : 10:18 AM, 22 December 2025.
ডিপ্লোমেটস প্রতিবেদক :

প্রবাসীদের ঐক্য ও দেশপ্রেম আমাদের বড় শক্তি: কনসাল জেনারেল

মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসেও একটি অনন্য উদাহরণ : এমপিপি ডলি বেগম 

সুদূর কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করছে, জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করছে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে ইতিহাস তুলে ধরছে—তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টো দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কমিউনিটির ঐক্য ও দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ জন্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন টরন্টোয় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শাহ আলম খোকন।

রোববার টরন্টোর বার্চমাউন্ট পার্ক কলেজিয়াট ইন্সটিটিউটে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টো আয়োজিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘বিজয় উৎসব’ হাজারও বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে ছিলো লোকারণ্য ও উৎসবমুখর। বৃদ্ধ, তরুণ, শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছিলো ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় উৎসব শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিজয় উৎসব মাতিয়ে রাখেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পি শুভ্র দেব ও সামিনা চৌধুরী।

রুমানা মালিক মুনমুনের উপস্থাপনায় কনসাল জেনারেল শাহ আলম খোকন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আমরা অর্জন করি চূড়ান্ত বিজয়। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সকল বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। এই বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং অগণিত মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও ত্যাগ। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই গৌরবময় উৎসবে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি গভীরভাবে আনন্দিত ও গর্বিত। আজকের এই দিনটি আমাদের জাতির ইতিহাসে এক অনন্য, অবিস্মরণীয় অধ্যায়—যে দিনটি আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা, লাল-সবুজের পতাকা এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অধিকার। কানাডায় বসবাসরত প্রবাসীরা শুধু প্রবাসে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন না, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আমরা চাই, প্রবাসী প্রজন্ম—বিশেষ করে আমাদের সন্তানরা—মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুক, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হোক। তিনি সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে পোস্টাল ব্যালটের রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানান।

খোকন বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্য, সহনশীলতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই মিলে একটি উন্নত, স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো—এই হোক আজ আমাদের অঙ্গীকার।

উৎসবের অন্যতম অতিথি, অন্টারিও প্রোভিনসিয়াল পার্লামেন্ট মেম্বার, বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ডলি বেগম সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানিয়ে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই গৌরবময় উৎসবে আপনাদের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। বিজয় দিবস শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও একটি অনন্য উদাহরণ—যেখানে একটি জাতি ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও আত্মমর্যাদার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ যে ত্যাগ ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা মানবাধিকারের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার কখনো বিনা মূল্যে আসে না।

তিনি বলেন, কানাডা একটি বহুসাংস্কৃতিক দেশ, আর বাংলাদেশি কমিউনিটি এই সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বের অংশ। প্রবাসে থেকেও আপনারা যেভাবে ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ধারণ করছেন—তা সত্যিই প্রশংসনীয়। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের আয়োজন শুধু স্মরণ নয়, বরং একটি বার্তা—যে বার্তা বলে দেয়, ইতিহাসকে সম্মান করলে সমাজ আরও শক্তিশালী হয়। জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এমন একটি অর্থবহ ও প্রেরণাদায়ক অনুষ্ঠানের জন্য।

জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি মাহবুব চৌধুরী রনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এই গৌরবোজ্জ্বল উৎসবে আপনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পেরে আমি গভীরভাবে গর্বিত ও আবেগাপ্লুত। বিজয় মানে শুধু একটি তারিখ নয়—বিজয় মানে আত্মত্যাগ, সাহস, সংগ্রাম এবং আমাদের অবিস্মরণীয় আত্মপরিচয়ের ঘোষণা।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও বীর সেনানীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত, অগণিত মা-বোনের ত্যাগ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস। প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের শেকড় ভুলিনি। জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টো দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির ঐক্য, মানবিকতা ও দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। এই বিজয় উৎসব তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। আজকের এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে আমাদের সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক সহযোগিতায়—আমি আপনাদের সবাইকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই।

বিজয় উৎসবে নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও বাংলাদেশি শিল্পীদের গানে পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত ও মুখরিত। শিল্পীদের পরিবেশনায় ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম ও বিজয়ের আনন্দ। দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন মনোজ্ঞ এই সাংস্কৃতিক আয়োজন, যা বিজয় উৎসবকে করে তোলে আরও বর্ণিল ও স্মরণীয়।

উৎসবে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের স্পন্সরদের সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এমপিপি ডলি বেগম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহাদ খন্দকার, দেবব্রত দে তমাল ও ছাদ চৌধুরীসহ অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ।

বিজয় উৎসবে বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন টরন্টো সিটির স্কারবোরো এলাকা ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থি কান্ডাভেল, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেহদী হাসান মারুফ ও উৎসব কমিটির আহ্বায় ইজাজ চৌধুরী। উৎসবে এসোসিয়েশনের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

BD EXPAT বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম বাংলাদেশে সহিংসতার দায় ড. ইউনূসের, দাবি শেখ হাসিনার শিরোনাম অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনসুলার সেবা স্থগীত শিরোনাম জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিজয় উৎসব যেন টরন্টোয় একখণ্ড বাংলাদেশ শিরোনাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এ কে খন্দকার বীর উত্তম আর নেই শিরোনাম বীর ওসমান হাদী, তোমার মন্ত্রে বাংলাদেশ দুনিয়ার কাছে মাথা উঁচু করে চলবে শিরোনাম লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শরিফ ওসমান হাদির শেষবিদায়